ইউক্রেনকে দায়ী করেছে।’ আইএইচটি ২২, নভেম্বর ২০১১।
এই রিপোর্টের মধ্য দিয়ে এইডসের ভয়াবহতা ফুটে উঠেছে। মধ্য-এশিয়া,
দক্ষিণ-এশিয়ার কাছাকাছি। তাছাড়া পূর্ব ইউরোপ
ও মধ্য-এশিয়ায় আমাদের শ্রমবাজার রয়েছে। যেখানে আমাদের দেশের
শ্রমিক রয়েছে। যারা অধিকাংশই অশিক্ষিত এবং তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ তথা গ্রামের কেটে
খাওয়া সাধারণ মানুষ। তারা না জানে নিজ সম্পর্কে, না জানে গণোরিয়া, সিফিলিস, জেনিটাল, হারপিস, শ্যাংক্রয়েড, কামাইডিয়া,
হারপিজ প্রোজেনিটালিস, গনোরিয়া, ওয়ার্টস বা যৌনাঙ্গে
আঁচিল, ট্রাইকোমোনিয়াসিস, হেপাটাইটিস (জন্ডিস), ভেজিনাল ক্যানভিডিয়াসিস, ব্যাকটেরিয়া জনিত ভ্যাজাইনোসিস, লিমফোগ্রানিউলোমা ভেবেরিয়াম, গ্রানিউলোমা ইংগ্রোনালী, ফোনডাইলোমা একুইসিনেটাস
ইত্যাদি রোগ সম্পর্কে (এ সব ডাক্তারী পর্যায়ের ব্যাপার, সাধারনের বুঝার মত নয়, তবে সিফিলিস ও গনোরিয়া নাম দুটি মানুষের মাঝে পরিচিত)। উল্লেখ্য এই সব যৌন রোগ থাকলে এইচআইভি (HIV) সংক্রমনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এইচআইভি (HIV)
নামক একটি ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে
রোগ-প্রতিরোধ মতাকে ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়। ফলে সহজেই সে ব্যক্তি
নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয় এমনতর অবস্থাটিকে এইডস বলে। সাম্প্রতিক সময়ে নানা কারণে শ্রমিক সংখ্যা আমাদের দেশে ফিরত আসা শ্রমিকের সংখ্যা
বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সব যৌন রোগের মধ্য দিয়ে এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা
অনেক বেশি। বিদেশে বসবাসরত শ্রমিকরা নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্ব কাটানোর জন্য
মদ্যপান এবং নারী সঙ্গ লাভ করে টেনশন মুক্ত থাকতে চেষ্টা করে। ফলে রোগাক্রান্ত যৌন সঙ্গীর মাধ্যমে এরা রোগাক্রান্ত হয়। শিরায় ওষুধ ব্যবহারকারী এবং অনিরাপদ রক্ত সরবরাহ ব্যবস্থা থেকে এই রোগ ছড়ায়। বিদেশে কর্মরত শ্রমিকরা ছুটিতে দেশে এসে তাদের পারিবারেও এই রোগ ছড়াতে পারে। নিজেরা কিন্তু চট করে সেটা বুঝতে পারে না। কারণ এইচআইভি মানুষের শরীরে দীর্ঘদিন সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্র্রে ১০ বছর এইচআইভি থাকবে ঘুমন্ত। এইচআইভি ঘুমন্ত থাকলেও এইচআইভি বহন করা মানুষেরা তো ঘুমন্ত না। তারা মহানন্দে তাদের শরীরে এইচআইভি ছড়িয়ে বেড়াবেন। জাতি অগ্রসর হবে ভবিষ্যৎহীন অন্ধকারের দিকে। বিদেশে অবস্থাকালে বিবাহ বহির্ভূত অনিরাপদ যৌনসঙ্গমের মাধ্যমে যে কেউ এই রোগে সংক্রমিত
হতে পারে। শ্রমশক্তি আমাদের দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান উৎস। তাদের উপরেই আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামো বহুল পরিমানে নির্ভরশীল। এইডস একটি দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমকে স্থবির করে দেয়। ফলে এর মোকাবেলা করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় বাজেটে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশের ভৌগলিক ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দেশেও এইডস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার
যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এইডস সম্বন্ধে
আমাদের সকলেই জানা প্রয়োজন। যৌন রোগ এবং এইচআইভি
সংক্রমনের মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে এইচআইভি। এইডস তো বটেই সাধারণ মানুষ যৌনরোগ সম্পর্কেও যথাযথ ধারনা পোষণ করেন না। একদিকে রক্ষনশীল সমাজ কাঠামো, অন্যদিকে তৃণমূল মানুষের সীমিতজ্ঞান এইডস প্রতিরোধ কার্যক্রমে
এক বিশেষ অন্তরায়। যারা এইডস নিয়ে কাজ করছে, কোন কোন মানুষ তাদেরকে বাঁকা চোখে দেখে। সামগ্রিক চিত্রটিতে
এটিই প্রকাশ পায় যে আমাদের দেশে এইডস প্রতিরোধ প্রসঙ্গটি এখনো নাজুক অবস্থানে রয়েছে। এমন্তর নানা প্রতিকূলতার ভেতর অনেক শিক্ষিত তরুন তরুণী এইডস প্রতিরোধ কর্মী হিসেবে কাজ করে
যাচ্ছেন। এইডস থেকে বাচাঁর লক্ষে সর্বাগ্রে এর বিস্তার, সংক্রমন প্রক্রিয়া এবং প্রতিকার-প্রতিরোধ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন
করে তুলতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন ব্যাপক প্রচারনাও সামাজিক আন্দোলন।
এইতো গেল বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের কথা। বর্তমানে বাংলাদেশের
প্রতিটি ইউনিয়নে দু’তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়
রয়েছে। সরকার এই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণীর বিজ্ঞান, ৯ম থেকে ১০ম শ্রেণীর সামাজিক বিজ্ঞানের সিলেবাসে এইডস অন্তর্ভূক্ত
করেছেন। কেন করেছেন? এইডস সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা যাতে জানতে পারে। বিভিন্ন দেশের সাম্প্রতিক এইচআইভি/এইডস্ পরিস্থিতি থেকে জানা যায় যে, নতুন এইচআইভি আক্রান্তদের প্রায় অর্ধেকই টিনএজ। কিন্তু আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এইডস বিষয়ক প্রবন্ধ গুলো কী শিক্ষকগণ পড়ান? আমি কমপক্ষে দশটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সার্ভে করেছি। শিক্ষকগণ এইডস বিষয়টা
এড়িয়ে যেতে চান। আর শিক্ষর্থীগণ এ বিষয়ে কথাই বলতে চান না। অপরদিকে গ্রামাঞ্চলের সাধারণ কৃষকদের কাছেও গিয়েছি এইডস বিষয়ক কথা বলতে কেউ বলেছেন-
‘এনজিওর আপা/ভাইদের কাছ থেকে এই রোগটির কথা শুনেছি’, কেউ বলেছেন- ‘বলা যাবে না,
এটা শরমের কথা’। আবার কেউ এই রোগটির কথা জানেন না। গ্রাম এবং শহরের মধ্যবিত্তদের
অবস্থা আরও ভয়াবহ। তারাও বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চান। যেহেতু যৌনরোগ এবং এইচআইভি সংক্রমনের মধ্যে একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে এবং আমাদের
সমাজ কাঠামোও রক্ষনশীল, তাই তৃণমূল মানুষের
এইডসের জ্ঞান সীমিত। বর্তমানে যারা এইডস নিয়ে কাজ করছে, তাদেরকেও এই তৃণমূল মানুষ অবজ্ঞার চোখে দেখে। এর মধ্য দিয়ে প্রকাশ মিলে আমাদের দেশে এইডস প্রতিরোধে কতটুকু ঝুকিপূর্ণ অবস্থানে
রয়েছে। সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন এনজিও এইডসের নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে
নির্দিষ্ট যৌন পল্লী, ভাসমান যৌন কর্মী, হিজরা এবং অপরাপর এমএমএমদের এইডস সচেতনত করার কার্যক্রম অনেক
জোড়ালো। এই সংকটের মধ্যেও অনেক শিক্ষিত তরুন-তরুণী এইডস কর্মী হিসেবে কাজ করছে। এ দিকটি আমাদের বড় অর্জন। এই অর্জনের মধ্য দিয়ে
এখনই এইডস সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং এইচআইভি সংক্রমন প্রতিরোধের উপায়গুলো তৃণমূল
পর্যায়ে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে যথাযথভাবে পৌঁছে দিতে হবে। তাই আজ বিশ্ব এইডস দিবসের
এই হোক আমাদের প্রধান অঙ্গিকার।
লিখেছেন : আবুল কাইয়ুম আহম্মদ
পোষ্ট : বাংলাদেশ সময় শনিবার সকাল ৮ : ৫২ মিনিট নভেম্বর ১২ ।